• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

দেশের বৃহত্তম ইফতার মাহফিল সাতক্ষীরার নলতায়

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৩  

ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এ রমজান মাসজুড়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায়। যেখানে প্রতিদিন একত্রে ইফতার করছে ৭ হাজার মুসল্লি।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে এ উদ্যোগ। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২৫-৩০ জন বাবুর্চি ইফতার তৈরির কাজ শুরু করেন, খরচ হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
সাধক আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) এর জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা নলতা গ্রামে। ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তখনকার সময় থেকে নলতার আশেপাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসঙ্গে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে প্রতিবছরই ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয় প্রতিদিন।  করোনায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়েছে ইফতার মাহফিল। তবে এবার ১০ হাজার নয়, করা হচ্ছে সাত হাজার মানুষের ইফতার আয়োজন। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া ইফতার মাহফিল চলবে ৩০ রমজান পর্যন্ত।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, করোনার কারণে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে ৭ হাজার করা হয়েছে। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মত আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২৫-৩০ জন বাবুর্চি ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করেন, চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত।
রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিশাল ছাউনির নিচে যেখানে বসে ইফতার করেন একত্রে ৭ হাজার মানুষ। আসরের নামাজের পরপরই ইফতার দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট-বড় সব মিলিয়ে তিনশো  যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করেন প্রতিদিন। প্রতিটি ইফতার প্লেট সাজানো হয় কলা, খেজুর, ফিরনি, ছোলা, চিড়াসহ নানা খাবার দিয়ে।
ইফতার তৈরিতে নিয়োজিত থাকা বাবুর্চিরা বলেন, "আমরা প্রতিদিন সকাল ৫ থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে বেলা ৫টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সিংগারা, ছোলা, ফিরনি তৈরি করি।"
স্থানীয় মাসুদ পারভেজ জানান, ছোটবেলা থেকেই আমি এখানে ইফতার করতে আসি। একসাথে সকলে মিলে ইফতারি করতে খুব ভাল লাগে। আমি এই উপজেলার সন্তান হিসেবে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন নিয়ে গর্ববোধ করি। 
লালমনিহাট থেকে আসা এক মুসল্লী বলেন, আমি শুনেছি এখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল হয়। একারণে এখানে দেখতে এসেছি।  এতগুলো মানুষের একসাথে ইফতার করা দেখে সত্যিই মন জুড়িয়ে গেছে। 
স্বেচ্ছাসেবক তারেক হাসান বলেন, ‘প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি, খুবই ভালো লাগে। আমরা তিন'শ জন স্বেচ্ছাসেবক মিলে প্রতিদিন ইফতারের খাবার বন্টন করি। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজাদারদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ 
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের এডহক কমিটির সদস্য  আবুল ফজল বলেন, ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) নলতায় মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে। প্রতিদিন সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয় ইফতার তৈরিতে। পুরো টাকা আসে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দানের মাধ্যমে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা