• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

জরায়ু সমস্যায় ভুগছেন উপকূলের নারীরা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১  

প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে থাকতে হয় উপকূলের মানুষদের। এতে পাল্টে যাচ্ছে উপকূলের মানুষের জীবনধারা। সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা জরায়ু সমস্যায় ভুগছেন বেশি। কারও জরায়ু কেটে বাদ দিতে হচ্ছে আবার কেউ কেউ চিকিৎসকের অধীনে রয়েছেন।

দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলো জরায়ুজনিত সমস্যার জন্য লবণাক্ততাকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা বলছেন, লবণাক্ততার প্রভাবে জরায়ুরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত গবেষণা প্রয়োজন। 

সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা (ফুলতলা) গ্রামের বিশ্বনাথ জোর্য়াদ্দারের স্ত্রী ছবিতা জোর্য়াদ্দার। ছবিতা একজন গৃহিণী। তিনিও জরায়ু রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছেন। তিনি জানান, এই অঞ্চলের অধিকাংশ নারী জরায়ু রোগে আক্রান্ত। কেউ জরায়ু টিউমার, কেউ জরায়ু ক্যানসারে ভুগছেন। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগও বেড়ে গেছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে এনজিওর প্রশিক্ষণের সময় তারা জানিয়েছে, ঋতুস্রাবের সময় নারীরা যে কাপড় ব্যবহার করে সেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকায় জীবাণু জরায়ুতে প্রবেশ করে। এতে জরায়ুজনিত রোগাক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এলাকার অনেক নারী লজ্জায় প্রথমে প্রকাশ করে না। তবে যখন বড় আকার ধারণ করে তখন চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছে।

ওই এলাকার পঞ্চানন মন্ডলের স্ত্রী কল্পনা রানী মন্ডল। জরায়ু, অ্যাপেন্ডিসাইটিস ও টিউমার তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে তাকে। জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়েছে তার। 

কল্পনা রানী বলেন, আমাদের এদিকের পানি লবণাক্ত। সেজন্য নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি আমরা। আমি খুলনায় অপারেশন করেছি। তবে চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ আমাকে বলেননি। আমাদের পাড়ার মধ্যেই এমন ১০-১৫ জন রয়েছে। তাদের অধিকাংশই জরায়ু সমস্যায় ভুগছেন।

সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের পানির সমস্যা নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন। সুশীলনের রিকল-২০২১ প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর এস এম জাকির হোসেন বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের প্রধান সমস্যা পানি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলকে লবণাক্ত করে ফেলেছে। এই লবণাক্ত পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় নারীদের। যা তাদের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। 

তিনি জানান, চর্মরোগ, গায়ের চামড়া ওঠে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়াসহ পানিবাহিত রোগগুলো বেশি হচ্ছে নারীদের। সব সময় লবণ পানিতে থাকা ও ব্যবহারের কারণে নারীদের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া একটি বড় সমস্যা। নারীদের জরায়ুতে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন নারীরা। এর মূল কারণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। মূলত এর প্রভাবেই নানা ধরনের সংকট ও নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

উপকূলীয় এলাকার আরেকটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা লিডার্স। লিডার্সের প্যারামেডিকেল চিকিৎসক সুব্রত রায় জানান, যেসব নারী নদীতে চিংড়ি পোনা আহরণ করেন তাদের চর্মরোগ, ঋতুস্রাবে সমস্যা, হাইজিনের সমস্যা হচ্ছে বেশি। জরায়ু নিম্নগামী। একটা সময়ে জরায়ু কেটে বাদ দিতে হচ্ছে। মূলত লবণাক্ততার কারণে এমনটি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামে নারীদের এই ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এলাকায় এখন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। 

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর দুটি উপকূলবর্তী উপজেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গেছে। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে এসব অঞ্চলের নারীরা জরায়ুসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বলে বেসরকারি সংস্থাগুলো দাবি করছে। তবে এই দাবিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো জরিপ করা হয়নি। 

তিনি বলেন, এটা নিয়ে ব্যাপকভাবে স্টাডি ও গবেষণা করা দরকার। আমরা নজর রাখব। তবে কোনো এনজিও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি এটা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন তবে আমরা সঠিক তথ্য পাব। বুঝতে পারব এটা কতটুকু সত্য। 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা