• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য রাত পর্যন্ত অপেক্ষা তাদের!

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

দুই বছর ধরে আমরা কখনো বাঁধে, কখনো গাছে, আবার কখনো পানিডোবা বাড়িতে থাকছি। সব সম্পদ হারিয়ে এখন কোনো কাজও পাচ্ছি না। লোকলজ্জার কারণে এই এলাকার নারীদের টয়লেট করার জন্য রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এখানে মৃতের কবর দেওয়ার মতো শুকনো জায়গার অভাব। শ্মশানে দাহ করারও সুযোগ নেই। 

 

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- মানুষ টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য শুধু আহাজারি করছেন। খাদ্য নয়, ত্রাণ নয়, তারা চান টেকসই বেড়িবাঁধ। আর এই বাঁধের জন্য কতকাল অপেক্ষা করতে হবে তা তাদের জানা নেই। উপকূলীয় নাগরিকরা ঝড়, দুর্যোগ ও জলাবদ্ধতার তাণ্ডবে বারবার বসত ঘর পরিবর্তন করছেন। বেঁচে থাকার জন্য তারা ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছেন। শহরে বন্দরে গিয়ে বস্তিবাসী হচ্ছেন। সেখানে কাজকর্ম করে জীবনধারণের চেষ্টা করছেন। অথচ একদিন তাদের সবকিছুই ছিল। এখন কিছুই নেই। তাদের বাড়িঘরে জোয়ার-ভাটা খেলে। 

রোববার ঢাকার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় এক ডজন সাংবাদিক সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, আশাশুনি এবং খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে উপকূলবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।  

সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। এ সময় বক্তব্য রাখেন- ‘উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’-এর পক্ষে সাংবাদিক নিখিল ভদ্র, পলাশ আহসান, সাজ্জাদ হোসেন, গাজি শাহনেওয়াজ, শাকিলা সুলতানা, মোহন কুমার মণ্ডল, তিমন বারুই, মাধব চন্দ্র দত্ত, অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম ও মোহাম্মদ আলি সুজন প্রমুখ। 

পর্যবেক্ষণে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সাংবাদিকরা জানান, সরকার পর্যাপ্ত টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ উপকূল রক্ষায় তার সামান্য অংশই ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। 

এরই মধ্যে সাতক্ষীরার ১৫নং পোল্ডারের অনুকূলে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ ছাড়া উপকূলের মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। দুর্দশাগ্রস্ত এসব মানুষ যেন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা উল্লেখ করে তারা বলেন, তাদের নাওয়া নেই, খাওয়া নেই। তারা নদীর নোনা পানির জোয়ার ভাটায় ভাসে আর ডুবে। প্রতিনিয়ত তারা ভাবেন কখন পানি আসছে আর কখন পানি সরে যাবে। 

এরই মধ্যে আশাশুনির প্রতাপনগরে বেড়িবাঁধ আবারো ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভয়ংকর সিডর, আইলা, আম্পান এবং সর্বশেষ ইয়াশের আঘাতে এসব এলাকা এখন পানিবদ্ধতার অভিশাপে ভুগছে। খাবার পানি সংগ্রহে নারীদের ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। এখানে নেই সুপেয় খাবার পানি। নোনা পানির দাপটে সব ধরনের কৃষি ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। 

রাস্তাঘাট না থাকায় নদীই তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- এসব এলাকায় চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় রোগ-ব্যাধিতে মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক। নদীতে ভাসমান ট্রলারে জন্ম নিচ্ছে শিশু। সংস্কারের অভাবে পড়ে থাকছে ভাঙ্গাচোরা বেড়িবাঁধ। এই এলাকা থেকে মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। শ্যামনগরের গাবুরা  ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতা কার্ডধারী ৫০ শতাংশ মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানান সাংবাদিকরা।

 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা