• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

দারিদ্রতায় সাতক্ষীরায় ১১ লক্ষ মানুষ পশু কুরবানিতে অক্ষম

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২১  

দারিদ্রতার কারণে আসন্ন ঈদুল আযহার কুরবানিতে সাতক্ষীরায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার পরিবারের ১১ লক্ষ ৯ হাজার মানুষ পশু কুরবাণি করতে অক্ষম। ফলে ঈদের দিনে কুরবানিকৃত পশুর গোশত খেতে অন্যের উপর চেয়ে থাকতে হবে তাদের।

এ দিন গোশত সংগ্রহ করতে ধনীদের দ্বারে দ্বারে অসহায় গরীব মানুষের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। যারা লাইনে দাড়িয়ে গোশত সংগ্রহ করতে পারেনা তাদের অনেকেই কিন্তু এ দিন কুরবানির পশুর গোশত খেতে পারে না। ফলে এধরণের পারিবারে পাশে এসে দাড়াতে আলেম ওলামারা পরামর্শ দিয়েছে। সরকারী হিসাব মতে এবছর সাতক্ষীরা জেলায় ৪৮ হাজার পশু কুরবানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৬ হাজার গরু ও ২২ হাজার ছাগল রয়েছে।

২৩ লক্ষ লোকের বসবাসরত জেলাটিতে প্রায় ৮০ ভাগ মুসলিম। সূত্র মতে চলতি মৌসুমে জেলায় প্রতিটি গরু কুরবানির জন্য সাত ভাগিতে ২৬ হাজার গরু কুরবানিতে ১ লক্ষ ৮২ হাজার পরিবার জড়িত। আর ছাগল করবাণি করছে ২২ হাজার পরিবার। পরিবার প্রতি ৪ জন সদস্য ধরলে ৪৮ হাজার পশু কুরবাণির জন্য ৮ লক্ষ ১৮ হাজার মুসলিমের কুরবানির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা ধরা হয়। এর বাইরে ১১ লক্ষ ৯ হাজার মানুষ দারিদ্রতা ও অচ্ছলতার কারণে কুরবানি করতে পারে না। এছাড়া সুষ্ঠু বিলি বন্টনের কারণে কুরবানিকৃত পশুর গোশত প্রকৃত হকদারের কাছে পাঠানো সম্ভব হয় না। গ্রাম পর্যায়ে কুরবানিকৃত পশুর গোশত অর্থাৎ গরীবদের মাঝে বন্টনের একটা ব্যবস্থা রয়েছে। তালা উপজেলার খলিষখালি ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটি হযরত আবুবক্কর ঈদগা মাঠের পেশ ইমাম মাওলানা মাসুম বিল­াহ জানান, তাদের গ্রামে পশু কুরবানির পর গরীবদের মাঝে বন্টনের অংশ গোস্ত মাথাপিছু ভাগ করে দেয়া হয়।

এতে যারা কুরবানি করেনা তারা মাথাপিছু এক কেজি পর্যন্ত লিল­াহর গোশত পেয়ে থাকে। জেলার অনেক এলাকায় লিল­াহর গোশত বন্টর এমন ব্যবস্থা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে সব এলাকায় কুরবানির গোশত বন্টনের এমন ব্যবস্থা থাকলে সকল মানুষের মাঝে কুরবানির গোশত পৌছানো সম্ভব হতো। প্রয়োজনে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কুরবানির গোশত সুষ্ঠু বন্টনের একটা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে কুরবানির ঈদের দিন সাতক্ষীরা শহরের কুরবানির গোশত সংগ্রহে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ধনীদের বাড়ির গেটের সামনে ভীড় করে। এক টুকরো গোশতের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া করোনা কালিন সময়ে এভাবে গোস্ত সংগ্রহ কালে সামাজিক দূরত্ব মানা হয় না। ফলে কুরবানির গোশত বিতরণের চেয়ে সমাজে করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জেলায় কুরবাণির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪৮ হাজার। সেখানে খামারিদের কাছে প্রস্তুত রয়েছে ৫৬ হাজার ৪০১টি বিভিন্ন প্রজাতির পশু। কুরবাণির চাহিদা মিটিয়েও জেলায় ৮ হাজার ৪০১টি কুরবাণি যোগ্য পশু অবিক্রি থেকে যাবে। ১২ হাজার ৮শ জন খামারি কুরবাণির এসব পশু দেখাশুনা করছে। জেলার ১১টি স্থায়ী হাট ও অসংখ্য অস্থায়ী হাট বাজারে এবার এসব পশু বেচাকেনা হচ্ছে।

এসব পশুর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৮১৩০টি গরু ও ৩৩৪৮টি ছাগল, কলারোয়া উপজেলায় ৫২৮৫টি গরু ও ৫৩২২টি ছাগল, তালা উপজেলায় ৭১৬৩টি গরু ও ৪১৮৬টি ছাগল, আশাশুনি উপজেলায় ২৯৯৩টি গরু ও ২০৫২টি ছাগল, দেবহাটা উপজেলায় গরু ১১৫৫টি ও ১১৮৬টি ছাগল, কলিগঞ্জ উপজেলায় ২৮১১টি গরু ও ৩৮২৬টি ছাগল এবং শ্যামনগর উপজেলায় ৩০৩৬টি গরু ও ৫৭৪৩টি ছাগল রয়েছে। জেলাজুড়ে কোরবানি যোগ্য গরু প্রস্তুত রয়েছে ৩১ হাজার ও ছাগল ২৫ হাজার ৪০১টি। এছাড়াও মৌসুমি গরু-ছাগল পালনকারীদের কাছেও উলে­যোগ্য সংখ্যক কোরবানির পশু রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৫৬ হাজারেরও অধিক কোরবানি যোগ্য গরু ও ছাগল প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে চাহিদা রয়েছে ৪৮ হাজার। কুরবানির পশু জবেহ করার পর পশুর রক্ত, হাড়, চামড়াসহ উচ্ছিষ্ট অংশ যথাযথ স্থানে মাটির নিচে পুতে ফেলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা