• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

নারী সার্জেন্ট নই, সার্জেন্ট আমি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২০  

বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম ট্রাফিক বিভাগ। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এবং যানজট নিরসনে নিয়োজিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন সার্জেন্ট পান্না আক্তার। একটা সময় যেখানে ডিএমপির ট্রাফিকের মাঠপর্যায়ে কোনো নারীর অংশগ্রহণই ছিল না, সেখানে পান্নার মতো তরুণীরা এখন সামলাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। রাখছেন সাফল্যের সাক্ষর, পাচ্ছেন স্বীকৃতিও।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস (৮ মার্চ) উপলক্ষে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সার্জেন্ট পান্না আক্তারের সাফল্যযাত্রার গল্প শুনেছে । আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন নানা চ্যালেঞ্জ এবং তা উত্তরণের কথাও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন।

পান্না আক্তারের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া থানায়। কৃষক বাবা খোরশেদ ফকিরের তিন মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে পান্না পঞ্চম। ২০০৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর পান্নার কঠিন পথচলা সহজ হয় মায়ের কারণেই। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে পান্না আক্তার বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন।

পান্না বলছিলেন, ‘নিজের প্রচেষ্টা আর পরিবারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় স্থানীয় ও সামাজিক রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যোগদান করি সার্জেন্ট হিসেবে। প্রথমে অনেকে সার্জেন্ট হিসেবে একজন নারীকে দেখে অবাক চোখে তাকাতেন। পেশাগত এ কাজে ওসব পাত্তা দেয়ার সুযোগ নেই। আমি নিজেকে কখনো নারী সার্জেন্ট ভাবি না। আমার পেশাগত পরিচয় সার্জেন্ট।’

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সাতরাস্তা মোড়ে দায়িত্ব পালনের ফাঁকে পান্না বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কিছু সীমাবদ্ধতায় বিড়ম্বনায়ও পড়তে হচ্ছে। শুধু আমি নই, প্রত্যেক নারী সহকর্মীকেই ওয়াশরুমের অভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের পুরো শিল্পাঞ্চলের মধ্যে একটি মাত্র স্থান রয়েছে রেইনবোতে। সেখানে গিয়ে আমাদের টয়লেট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব কিছু সারতে হয়। এ সমস্যায় শুধু নারী বলেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পুরুষ সহকর্মীদের ক্ষেত্রে বাস্তবিক সমস্যা কম। আমার মনে হয় এ জায়গায় আমাদের পরিবর্তন জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘সার্জেন্ট হিসেবে আমাকে যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের নিয়ে কাজ করতে হয়। চালক শ্রেণি অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পুরুষ সার্জেন্টদের মতো পাত্তা দিতে চায় না। এটা আমাদের অ্যাপ্রোচের কোনো সমস্যা নয়, এটা তাদের সমস্যা। শুরুতে নারী সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বেশকিছু অভিযোগ দেয় বাসচালক-হেলপাররা। পরিস্থিতি বুঝে এসব ক্ষেত্রে আমাকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে। ঠান্ডা মাথায় সামাল দিতে হয়েছে। ভিডিও ক্যামেরা সরবরাহের জন্য ডিএমপিকে ধন্যবাদ। কেউ ঝামেলা করলেই আমরা তা ক্যামেরা অন করে পরিস্থিতি রেকর্ড করছি এবং উধ্র্বতনদের অবহিত করছি। এখন এ জায়গায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। কেউ উল্টাপাল্টা অভিযোগ করতে পারে না।’

গণপরিবহনে নারী নিপীড়নের ঘটনা অহরহ ঘটছে। মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সার্জেন্ট হিসেবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জানিয়ে পান্না আক্তার বলেন, ‘ট্রাফিক নির্দেশনা যদি গণপরিবহন ও যাত্রী উভয়ে অনুসরণ করেন, তাহলে নিপীড়ন কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যাত্রী যদি নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ান, তাহলে বাসও নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে বাধ্য। কারণ বাসের চাহিদা তো যাত্রী। নির্ধারিত স্থানে বাস দাঁড়ালে নারী যাত্রীরা ধীরে-সুস্থে বাসে উঠতে পারবেন। বাসের হেলপার-কনডাক্টরের অপ্রীতিকর কিংবা ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের মুখোমুখি হতে হবে না নারী-শিশু যাত্রীদের। অপ্রতুল গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং গণপরিবহনের ভেতরে যৌন হয়রানি কিংবা নিপীড়নের ঘটনা মোকাবেলায় নারীদের সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। পুলিশ বক্সে নেমে দাঁড়িয়ে নিপীড়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। কারণ পুলিশিং অনেকগুণ শক্তিশালী হয়েছে। তাছাড়া ৯৯৯-এ কল করে দ্রুত পরিস্থিতি জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।’

পান্না বলেন, ‘নারীরা পুরুষের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। আমি নিজেকে সার্জেন্ট মনে করি, নারী সার্জেন্ট নয়। আমার পদেও নারী শব্দটি নেই। আমি আমার পেশাগত জীবনে সেটাই দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে প্রমাণ করেছি। যে জন্য আমি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের শ্রেষ্ঠ সার্জেন্টের পুরস্কার পেয়েছি। আমার পারদর্শিতা আছে বলেই হয়তো গত তিন বছর পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পালন করেছি। বাহিনীর সেই আস্থাটা তো এমনিতে হয়নি। কাজেই সেটার প্রমাণ দিতে হয়েছে।’

নারীর ক্ষমতায়নে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করে পান্না আক্তার বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অবদান অসামান্য। তার নির্দেশনায় পুলিশে সার্জেন্ট হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। প্রত্যেকটি নারী সার্জেন্টই পেশাগত কাজে প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাহিনীতে আমাদের কার্যক্রমের পর্যালোচনাও প্রশংসা পেয়েছে। নারীর এগিয়ে যাওয়া, ক্ষমতায়ন ও পদায়নের ক্ষেত্রে পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ এবং সফলতা বড় ধরনের উদাহরণ হতে পারে।’

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা