• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

শিশুরা স্কুলে সবসময় মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষতি হবে?

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে করোনার সংক্রমণ এড়ানো যেতে পারে। সংক্রমণটির বিস্তাররোধে কেবল শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হাত ধোয়ায় যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি ফেস মাস্কও ব্যবহার করতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, টিকা না নেওয়া লোকদের কোভিড-১৯ প্রতিরোধের প্রধান মাধ্যম হলো ফেস মাস্ক। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ফেস মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদেরকে এখনও করোনার টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হয়নি।

করোনা মহামারিতে দীর্ঘসময় বন্ধ রাখার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে, এমনকি স্কুলও। স্কুল খুলে দেওয়াতে অভিভাবকরা যেমন সন্তুষ্ট হয়েছেন, তেমনি খুশি হয়েছে শিশুরাও। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে শিশুদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কড়া পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে- মাস্ক পরতে হবে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সাবান পানিতে হাত ধুতে হবে ও অন্যান্য। অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সকলেই এ ব্যাপারে বেশ সচেতন।

কিন্তু অনেক অভিভাবক আশঙ্কায় আছেন যে, স্কুলে সারাদিন মাস্ক পরে থাকলে শিশুর কোনো ক্ষতি হবে না তো? তাহলে আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক শিশুর ফেস মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।

শিশু মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়?

অনেক পিতামতাই দুশ্চিন্তায় থাকেন যে ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে শিশুর অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যার ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে হাইপোক্সেমিয়ার মতো পরিণতি হতে পারে। হাইপোক্সেমিয়াতে অর্গান ও টিস্যু যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না।পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হার্ট ও ব্রেইনে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এর চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও ঘনিয়ে আসতে পারে।

 

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ফেস মাস্ক ব্যবহারে শিশুর হাইপোক্সেমিয়ার ঝুঁকিকে নাকচ করে দিয়েছেন। মূলত মাস্ক তৈরি করা হয় শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য উপকরণ দিয়ে, যার ফলে শিশুর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বাধাপ্রাপ্ত হয় না। মাস্ক পরেও শিশু প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় বলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে বা শিখতে সমস্যা হয় না। দুই বছর বা তদোর্ধ্ব বয়সের শিশুরা দীর্ঘসময় নিরাপদে মাস্ক পরে থাকতে পারবে, যেমন- স্কুলে বা চাইল্ড কেয়ারে।

 

মাস্ক পরলে শিশুর ফুসফুসে প্রভাব পড়ে?

কেউ কেউ আশঙ্কা করেন যে, মাস্ক ব্যবহার করলে শিশুর ফুসফুসে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করছেন যে, এমনকিছু হয় না। মাস্ক পরলে শিশুর ফুসফুসের স্বাভাবিক বিকাশসাধন বাধাগ্রস্ত হয় না। মাস্ক এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে এটি ভাইরাসযুক্ত তরলকণা আটকে রাখতে পারে, কিন্তু অক্সিজেন প্রবাহিত হতে পারবে। মাস্কের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন প্রবাহিত হয় বলে শিশু প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, করোনার সংক্রমণে ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তাই এমন ক্ষতি এড়াতে শিশুকে মাস্ক পরার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

মাস্ক কি শিশুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ধরে রাখে?

আমরা শ্বাস ছাড়ার সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করি। এর স্বাভাবিকতা বজায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। গুজব ছড়িয়েছে যে, মাস্ক পরলে কার্বন ডাইঅক্সাইড পয়জনিং (হাইপারক্যাপনিয়া) হতে পারে অথবা আমরা যে শ্বাস ছাড়ি তা পুনরায় গ্রহণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক পরাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড আটকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। শিশু থেকে বয়স্ক, সকলের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

কার্বন ডাইঅক্সাইডের কণাগুলো শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসযুক্ত তরলকণার চেয়েও ছোট। এগুলো এতই সূক্ষ্ম যে কাপড় বা ডিসপোজেবল মাস্কের শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য উপকরণে আটকাতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, চিকিৎসকরা সারাদিন টাইট ফিটিং মাস্ক পরে থাকেন, কিন্তু কোনো ক্ষতি হয় না।স্কুল পড়ুয়া শিশুদের যে বয়স তাতে দীর্ঘসময় মাস্ক পরলে ক্ষতি হবে না। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে কেউ শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগলে বা অন্যকোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মাস্ক পরলে শিশুর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়?

কারো কারো ধারণা এই যে, মাস্ক পরলে শিশুর শরীর এক ধরনের চাপে থাকে ও ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে করোনা বা অন্য ভাইরাসের আক্রমণে মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু শিশু মাস্ক পরলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিমত্তা হারায় তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে, কোভিড-১৯ এর উপসর্গ থাক বা না থাক, করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

আমরা জানি যে, মাস্ক সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি-হাঁচির ভাইরাসযুক্ত তরলকণা আটকিয়ে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এটি অন্যভাবেও আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে- মাস্ক পরলে মুখমণ্ডল স্পর্শের প্রবণতাও কমে আসে। গবেষণায় জানা গেছে, মুখমণ্ডল স্পর্শ করলে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বাড়ে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা