• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

আগামী মৌসুমে বিনামূল্যে তেলবীজ পাবেন কৃষকরা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা আনতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে তেলবীজ সরবরাহ করবে সরকার। আগামী মৌসুমে এ কার্যক্রম শুরু হবে। তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, তিল, নারিকেলের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি সভাও করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। আর ভোজ্যতেলের মধ্যে দেশ সয়াবিনের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়।অন্যদিকে দেশে চাহিদার যে অংশ ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়ে থাকে, তা মূলত সরিষা থেকে পাওয়া যায়।

সরকার চাইছে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই তেলের উৎপাদন বাড়াতে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।এদিকে, বীজ নিয়ে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় তেলবীজ সংগ্রহের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া প্রণোদনার বিষয়টিও উঠে আসে।

জানা গেছে, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ মেয়াদে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা করেছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, তিল, নারিকেল ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বিনা) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তেলবীজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সূর্যমুখীর হাইব্রিড (এফ-১) জাত, নারিকেলের দেশি উফশী জাত এবং বারি ও বিনার উদ্ভাবিত তেল জাতীয় ফসলের উফশী জাত প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।

এছাড়া রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার (২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫) সঙ্গে সংযুক্ত একীভূত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করারও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সংগ্রহ করা বীজ কীভাবে চাষি পর্যায়ে যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগ্রহ করা তেল বীজ জাতভিত্তিক ও অঞ্চলভিত্তিক সময়মতো সরবরাহের লক্ষ্যে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিএই ১টি রোডম্যাপ প্রস্তুত করবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠ পর্যায়ে কৃষদের কাছে বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

সরিষা-জানা গেছে, বিএডিসির সংগ্রহে প্রায় ৯০০ মেট্রিক টন সরিষা বীজ মজুত রয়েছে। এর সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাষি পর্যায় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯০০ মেট্রিক টন সরিষা বীজ সংগ্রহ করে প্রণোদনার আওতায় ১৮ লাখ বিঘায় চাষাবাদের জন্য চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমন-পতিত-বোরো ক্রপিং প্যাটার্নে স্বল্প জীবনকালীন সরিষা বীজ অন্তর্ভুক্ত করতেও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে যেখানে বোরো আবাদ সম্ভব নয়, সেখানে কিছুটা দীর্ঘজীবনকালীন সরিষা আবাদ করতে বলা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমন এবং বোরোর আবাদের মধ্যে যে ব্যবধান থাকে, তা বাড়িয়ে সরিষার আবাদ দ্বিগুণ করা হবে। আর এটিই হলো ক্রপিং প্যাটার্ন পদ্ধতি।এ পদ্ধতি প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) কমলারঞ্জন দাশ বলেন, এটাকে বাংলায় শস্য বিন্যাস বলে। আমনের পর সরিষা আবাদ করা হয়। এরপর বোরো ধান আবাদ হয়। আমন এবং বোরোর মধ্যে সময়কালের ব্যবধান খুব কম ছিল। সেটা বাড়ানোর জন্য আমরা আমনের জীবনকাল কমিয়ে নিয়েছি। এখন ১৪৫ দিন লাগে না। ১১০ দিনে ফলন চলে আসবে। তখন সরিষা আবাদ করা যাবে। যাতে বোরোতে কোনো সমস্যা না হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে তেল জাতীয় ফসল চাষ হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষাই মুখ্য। সরিষা আবাদ হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে; যাতে ফলন হয়েছিল প্রায় সাত লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন।

চিনাবাদাম/সয়াবিন-বিএডিসি এবং ডিএইর চাষি পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা বীজ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে প্রণোদনার মাধ্যমে আবাদ করা হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়বে। যেহেতু চিনাবাদাম এবং সয়াবিন বীজ চাষি পর্যায়ে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়, তাই চিনাবাদাম ও সয়াবিন বীজ পরবর্তী মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বীজ উৎপাদনকারী চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হবে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০২২-২৩ বর্ষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূর্যমুখী-জানা গেছে, আগামী বছর ৮০ মেট্রিক টন সূর্যমুখীর বীজ প্রয়োজন হবে। সব বীজই হবে হাইব্রিড হাইসান-৩৩ জাতের। ব্র্যাকের মাধ্যমে ১০ মেট্রিক টন এবং বিএডিসি-র মাধ্যমে ৭০ মেট্রিক টন হাইব্রিড হাইসান ৩৩ জাতের সূর্যমুখী বীজ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বীজ সংগ্রহ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনায় চাষি পর্যায়ে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নারিকেল চারা-বিএডিসির নিজস্ব হর্টিকালচার সেন্টারে উৎপাদিত নারিকেল চারা দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনায় বিনামূল্যে চাষিদের মধ্যে চারা সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ভোজ্যতেলের ৪০ শতাংশ দেশি উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করার বিষয়ে আমাদের ৩ বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা আছে। সেজন্য বিএডিসির বীজ আমরা প্রণোদনার মাধ্যমে দিয়ে দেব। বিনামূল্যে কৃষকরা এ বীজ পাবেন।

তিনি জানান, সরকার কৃষি উৎপাদনের দিকে জোর দিয়েছে। সেজন্য সরকার এগুলো বিনামূল্যে দেবে। আগামী মৌসুম থেকে এসব বীজ দেওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ আমনের পরে যে মৌসুম আসবে, সে সময় বীজ লাগানো যাবে।মহাপরিচালক আরও বলেন, সারাদেশে এটি বাস্তবায়ন হবে। ডিইর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন হবে, আর বীজ বিতরণ করবে বিএডিসি। কৃষক পর্যায়েও কিছু বীজ সংগ্রহ করা হবে। সরকারিভাবে যে বীজ আমরা প্রণোদনা দেবো সেটা মূলত বিএডিসির স্টোরে থাকবে। সেগুলোই মূলত বিতরণ করা হবে।

 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা