• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

পদ্মা সেতুর বদৌলতে সাতক্ষীরায় মৎস্য চাষে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২২  

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো বহুকাঙ্খিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি  সাতক্ষীরায় মৎস্য চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে এই পদ্মা সেতু। কক্সবাজার হতে চিংড়ি পোনা সরবরাহ থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানিতে নতুন করে গতি ফিরে আসবে। উপকৃত হবে দেশের সাদাসোনা খ্যাত  চিংড়ির শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

উপকূলীয় জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ চাষে সমৃদ্ধ হলেও চিংড়ির পোনা আসে কক্সবাজার থেকে। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেওয়ার কারনে ফেরি ঘাটে দীর্ঘসূত্রতা ও যানজটের কারণে বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোনা ব্যবসায়ী ও ঘের মালিকরা। অক্সিজেন ফেল করে মারা গেছে কোটি কোটি চিংড়ি পোনা। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য এক সময় কক্সবাজার থেকে বিমানে চিংড়ি পোনা পরিবহন শুরু হয়। এমনকি বেশ কয়েক বছর হেলিকপ্টারও চড়েছে চিংড়ি পোনা। কিন্তু পোনার দাম কমে যাওয়ায় সেটাও ধরে রাখা যায়নি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার পাল্টাবে সেই পরিস্থিতি। ফেরি ঘাটের বিড়ম্বনার অবসানের মধ্যদিয়ে কম সময়ে পোনা এসে পৌছানোর কারনে চিংড়ি চাষে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় বাগদা ও গলদা পোনার চাহিদা প্রায় ৩৫০ কোটি। এর মধ্যে বাগদা পোনার চাহিদা ৩৪০ কোটি এবং গলদা পোনার চাহিদা ১০ কোটি ৫৫ লক্ষ। সাতক্ষীরার প্রয়োজনীয় বাগদা পোনার প্রায় সবটাই আসে কক্সবাজার থেকে।

সূত্র আরো জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় বর্তমানে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। যেখানে জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে একাংশ বিদেশে রপ্তানি এবং অবশিষ্ট মাছ দেশের অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে জেলাতে ৫০ হাজার ১৮টি পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। এছাড়া জেলায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর লবনাক্ত জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। জেলায় মৎস্য হ্যাচারি রয়েছে ২৫টি, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে ৪টি, মৎস্য আড়ৎ রয়েছে ৩২টি। এছাড়া ২৮৫টি মৎস্য ডিপো, ৪৪টি বরফকল, ১৫টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ৫৮টি পাইকারী মৎস্য বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা বছর মাছ বাজারজাত করা হয়।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরায় উৎপাদিত প্রায় এক লাখ টন চিংড়ি ও সাদা মাছ এখন দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌছাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। রাজধানী ঢাকার মানুষ বরফ ছাড়াই সাতক্ষীরার জীবিত টাটকা মাছ কিনতে পারবে। ঘেরগুলো হতে রাতে ধরা মাছ ঢাকার বাজারে সকালে খুচরা ক্রেতারা এসে পৌছানোর পূর্বেই পৌছে যাবে। এমন প্রত্যাশা এখন সাতক্ষীরার মাছ ব্যবসায়ীদের।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মৎস্য উৎপাদনে সাতক্ষীরায় নীরব বিপ্লব হবে। জেলার জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত প্রায় এক লক্ষ মেট্রিক টন মাছ দেশের অন্যান্য জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। মৎস্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ফলে জেলাতে একদিকে যেমন নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সমৃদ্ধি হয়েছে জেলার অর্থনীতি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরার মৎস্য সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে।

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়িপোনা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, সাতক্ষীরার ঘেরের জন্য প্রয়োজনীয় বাগদা চিংড়ির রেণু’ র প্রায় ৮০ শতাংশ কক্সবাজারের উৎপাদিত হ্যাচারি থেকে আনা হয়। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে সাতক্ষীরায় আনার কারণে অনেক সময় বাগদা রেণুর মান সঠিক থাকে না। ফলে এই রেণু ঘেরে ছাড়ার পর অনেক সময় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। পদ্মা সেতু চালু হয় এখন অল্প সময়ের ব্যবধানে কক্সবাজার থেকে রেনু পোনা সাতক্ষীরা এসে পৌঁছাবে। এতে করে চিংড়ি চাষীরা উপকৃত হবেন। সাথে সাথে বাড়বে মাছের উৎপাদন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা