• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ফোনে প্রতারণার ফাঁদ, হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩  

সাতক্ষীরার প্রেস ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে ছেলেকে দোকানে রেখে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে তার মোবাইলফোনে একটি কল আসে। সেই ফোনে নিজেকে সাব-ইন্সপেক্টর মনির পরিচয় দেওয়া লোকটি তাকে বলেন, আপনার ছেলের নাম কি আলি মুক্তাদা? তখন তিনি উত্তর দিলেন- হ্যাঁ। এরপর সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়দাতা ব্যক্তিটি বললেন, আপনার ছেলেকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছি। একই সাথে বাবু নামে আরও একটি ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তারা এখন আমাদের হেফাজতে আছে। এই নিন আপনার ছেলের সাথে কথা বলুন।
এরপর অপর প্রান্ত থেকে একজন কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ভাঙা গলায় বলল- বাবা আমার কোনো দোষ নেই, বাবু আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। স্যারকে কিছু টাকা দিলে আমাকে এখনি ছেড়ে দেবে। স্যারের এই নম্বরে (০১৯৭০-৪৫৭৮৮৭) বিকাশ করা আছে। বাবা তুমি আমাকে বাঁচাও। বলেই ফোনটি কেটে দেয়।
প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি ওই ব্যবসায়ী। তবে তার সন্দেহ হলে সাথে সাথে ছেলের মোবাইলে ফোন করে নিশ্চিত হলেন তার ছেলে এখন দোকান চালাচ্ছেন। পরে তিনি যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়দাতা ব্যক্তিটির সাথে দেখা করে টাকা দিতে চাইলে ওই লোক আর ফোন রিসিভ করেনি। পরে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় এ ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে সাতক্ষীরা সদরের এক মধু ব্যবসায়ী মানিক হোসেনের। কিছুদিন আগে একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার থেকে বিএসটিআই কর্মকর্তা পরিচয়ে তাকে ফোন দিয়ে বলা হয়- এখনই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাবে। তারা এখন সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়ে অবস্থান করছে। তবে তিনি বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠালে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান হবে না। তিনি ওই ঘটনার কিছুদিন আগে বিএসটিআই খুলনা অফিসে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। এজন্য বেশি ঝামেলায় না গিয়ে তাকে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে পরে খুলনার বিএসটিআই অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুল আলীম জানান, পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি পুরনো মোবাইল ফোন কিনেছিলেন তিনি। কয়েক বছর ধরে সেটি ব্যবহারও করছেন। তবে হঠাৎ একদিন সকালে তার মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন করে জানানো হয়- সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে তাকে ফোন করা হয়েছে। তার ব্যবহারিত মোবাইল ফোনটি চোরাই। থানায় অভিযোগ আছে। এখনই তার মোবাইলসহ সাতক্ষীরা সদর থানায় হাজির হতে হবে। তা না হলে তার বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের করা হবে। তবে তিনি এখনই বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠালে আর কোনো সমস্যা নেই! ভয় পেয়ে আব্দুল আলিম সেই বিকশ নাম্বারে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
এভাবেই কখনো পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষদের মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
চক্রটির বিরুদ্ধে কখনও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, লাইন্সেস আবেদনকারী, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। এভাবেই প্রতিনিয়ন সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের সহজ-সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। এদের প্রতারণার জালে আটকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। এসব বিষয়ে ভয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেন না। তবে, সম্প্রতি চক্রটির কাছে প্রতারিত হওয়া বেশ কিছু ঘটনার জানাজানি হওয়ার পর টনক নড়েছে পুলিশ প্রশাসনের।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সতর্কতরামূলক পোস্ট দিয়ে সবাইকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, এরকম বেশ কিছু প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। দ্রুত এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা