• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

মানবতার সুস্থতা চাই

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২১  

 

শুনহে হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” – চন্ডীদাস। মধ্যযুগকে বলা হয় অন্ধকার যুগ কিন্তু সেই যুগে এক কবি মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। আজ এতোদিন পরে সেই কবিতা আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দেয় কোন কিছুই মনুষ্যত্বের উপরে নয়। মানব সভ্যতার শুরু হয়েছিল বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বস্তু আবিষ্কারের মাধ্যমে কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের মাথায় যেন ক্ষমতার নেশা পেয়ে বসলো। আমরা জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় বস্তুর পরিবর্তে মানুষ মারার মারণাস্ত্রের আবিষ্কারের দিকে বেশি ঝুঁকে গেলাম। নিজেদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করলাম বর্ণে, ধর্মে, জন্ম পরিচয়ের মাধ্যমে। এক আদম হাওয়া বা এ্যাডম ও ইভ এর সন্তান হয়েও কি অবলীলায় হত্যা করতে শুরু করলাম একে অপরকে। এর বিনিময়ে কি পেলাম? রক্ত শুধুই রক্ত। মানুষ কি রক্ত খেয়ে বাঁচে? মানুষ তো দানব না তবে কেন এই রক্তের গঙ্গাস্রোত? যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে শুধু কান্না, হাহাকার আর মৃত্যুর চরম বিভীষিকা। আমরা ভাবলাম, আমি তো শান্তিতে আছি, আমার কি? ছোট ছোট বাচ্চার হাহাকার আমাদের অট্টালিকায় পৌঁছালো না, বুঁদ হয়ে থাকলাম নিজের আরাম আতিশয্য নিয়ে। আফ্রিকান অঞ্চলের হাজার হাজার হাড় জিরজিরে ক্ষুধার্ত শিশুর অসহায় চাহনি আমাদের চোখে পড়লো না। আমরা ব্যস্ত থাকলাম কত বহুতল ভবন বানানো যায় তার তীব্র প্রতিযোগিতা নিয়ে। কৃত্রিম ঝর্ণা, আলোর ফোয়ারা, রোবট সোফিয়া হাজার হাজার বিস্ময়কর আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন আমরা। এক আদম সন্তানের কান্নার কাতর ধ্বনি পৌঁছালো না সুখ নিদ্রায় মগ্ন আমাদের কর্ণ কুহরে। তারপর? রূপকথার মতো কি অতঃপর আমরা সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে পেরেছি? আজীবনের সুখের সনদ নিয়ে নিতে পেরেছি? পারি নি। একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন আর প্রকৃতি সব সময় ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। এই যে জীবন যাপনের প্রাচুর্যে আমরা পরিবেশ বিপর্যয় করে চলেছি, এর কি কোন প্রতিক্রিয়া নেই? উন্নত দেশ ভাবে, আমাদের আর কি পণ্য উৎপাদিত হবে তৃতীয় বিশ্বে আর যত পরিবেশ দূষণ হবে সেখানেই কিন্তু এই পৃথিবী, এই আকাশ এক, এক আমাদের বায়ুমন্ডল। স্বার্থপরের মত ভৌগলিক সীমারেখা আলাদা করে নিজ নিজ উন্নয়নে ব্যস্ত সবাই যেন এই কিছু বিষয়ে এক হওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছি। ফলাফল করোনার মতো বিপর্যয়। মৃত্যু আজ দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে জাত- পাত, ধর্ম – বর্ণ আর ভৌগলিক রেখার বিভেদ মুছে। হাদিসে আছে, রোজাদারের জন্য সাগরের মাছেরা দোয়া করে। দোয়া যদি করতে পারে, তবে বদ দোয়া কি করতে পারে না? গহীন বনে, গভীর সমুদ্রে সব জায়গায় প্লাস্টিক দ্রব্য ফেলে যাদের বসবাসের বিপর্যয় করছি, তারা কি বদ দোয়া করতে পারে না? তাদের বদ দোয়ার ফল এই বৈশ্বিক বিপর্যয়। আইলান কুর্দির কথা মনে আছে? যে সমুদ্রের উপকূলে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সেদিন আইলান কুর্দি নয়, সমগ্র মানবতা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সিরিয়ার সেই শিশুরা? আফ্রিকার অনাহারি বাচ্চারা? সবার কাতর ধ্বনি এক হয়ে সাত আসমান কাঁপিয়ে পৌঁছে গেছে বহুদূর। কর্তব্য কি তবে? করোনার ওষুধ, প্রতিষেধক হয়তো করোনা কমাবে কিন্তু মানবতা যে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তাকে সুস্থ্য করে না তুললে পুরো মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পড়বে। পৃথিবীর বহু উন্নত মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে, প্রতœতাত্তি¡ক খোঁড়া খুড়ি করে করে তাদের খোঁজ পাওয়া যায়। এমন না হয় আমাদের নিজে সুখে থাকার উন্মাদনায় আমাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতা অন্য কেউ খুড়ে বের করুক! কবি জালালুদ্দিন রুমি বলেছিলেন, “আমি গতকাল বুদ্ধিমান ছিলাম তাই আমি পৃথিবী পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম, আজ আমি প্রাজ্ঞ তাই আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই”। আমি পৃথিবী পরিবর্তন করতে বলছি না, নিজেকে পরিবর্তন করতে বলছি, একটু মানবিক হতে বলছি। বলছি একটু হেসে কথা বলি, এতীমের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই। আপনার আমার সাধ্য নেই আফ্রিকার বাচ্চাদের জন্য কিছু করার কিন্তু আমাদের বাসার পাশে যে অসহায় শিশুরা আছে, তার জন্য কি কিছুই করতে পারি না? করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা কত অসহায়? প্রকৃতপক্ষে কত দূর্বল। পাশের দেশে হাজার হাজার মারা যাচ্ছে বলে ভাবার কোন উপায় নেই যে আমরা নিরাপদ, আশঙ্কার মধ্যে আছি আমরা সবাই। হাত বাড়িয়ে দিন, পাশের জনের প্রতি। সহযোগিতার হাত, ভালোবাসার হাত। ভুলে যান বিভেদ, বিদ্বেষ। এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার এটাই মূল মন্ত্র। বেঁচে থাকাটাই এখন সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় আশির্বাদ।

 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা